নীরব-নির্জনে মরুপ্রান্তরে বসে আছো তুমি,
হয়তো ভাবছো জীবনের স্মৃতি।
স্মৃতির আড়ালে লুকিয়ে আছে অগণিত স্মৃতি।
অতীত স্মৃতির আবেগ-অনুভূতির অনুসরণে
আজও স্মৃতি হয়ে আছো তুমি।
[এই স্তবকে কবি একাকী নির্জন প্রান্তরে বসে প্রিয়জনের স্মৃতিচারণ করছেন। জীবনের গতিময় স্রোত থেকে দূরে এসে তিনি অতীতের সেইসব স্মৃতিতে ফিরে গেছেন, যা তার মনের গভীরে লুকিয়ে আছে। এখানে স্মৃতির অদৃশ্য উপস্থিতি এবং অনুভূতির গভিরতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।]
আজও সেই গতিময় সুরমার পাড়ে বসে থাকা,
দুজনের মনের আবেগ-অনুভূতির শত কথা
ভাবি মনের আবেগভরা মনে।
[এখানে কবি একটি নির্দিষ্ট স্থানের উল্লেখ করেছেন – সুরমার পাড়। এটি তাদের দুজনের মিলনের একটি প্রতীকী স্থান। কবি সেই স্থানে বসে তাদের অতীতের আলাপ-আলোচনা, আবেগ ও অনুভূতিগুলো স্মরণ করছেন। এই স্তবকটি প্রেম ও স্মৃতির সঙ্গে স্থানের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে তুলে ধরে।]
জীবনের চলন্ত স্রোতধারার মতো
চলে যায় সময় ও মুহূর্ত;
কিন্তু স্মৃতির আয়নায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে
জনম-মুহূর্তের স্মৃতি।
[জীবনকে এখানে এক চলন্ত স্রোতধারার সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যায়। কিন্তু জীবনের কিছু বিশেষ মুহূর্ত, যা “জনম-মুহূর্তের স্মৃতি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো চিরকাল মনের আয়নায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এই স্তবকটি সময়ের ক্ষণস্থায়ীতা এবং স্মৃতির অমরত্বকে তুলে ধরে।]
“মানুষ মরে যাবে”, তা নিয়তির চিরন্তন সত্য।
হয়তো যুগে যুগে স্মৃতিগুলো
মনের আয়নায় বিচরণ করবে সময় ও মুহূর্তে।
স্মৃতির চলন্ত স্রোতধারায়
মনের ব্যাকুল ভাবনায় খুঁজে পাবো তোমায়।
[এই অংশে কবি জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য – মৃত্যু নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষ মরে গেলেও স্মৃতিগুলো অমর হয়ে থাকে। সময়ের প্রবাহের সঙ্গে সঙ্গেও সেই স্মৃতিগুলো মনের মাঝে ঘুরে বেড়ায়, আর সেই স্মৃতির মাঝেই প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়া যায়।]
স্মৃতির আকাশে শুকতারা হয়ে থাকবে সেই তুমি,
আমার মনের ভুবনে, নির্জন নিশীথে সেই সাগরপাড়ে
বসে আজও ভাবি তোমাকে, “তুমি কোথায়? কেমন আছো?”
তা ভাবনার আড়ালে প্রাণভরে দেখি তোমায়।
[এই স্তবকে প্রিয়জনকে “শুকতারা”র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা স্মৃতির আকাশে উজ্জ্বল হয়ে আছে। কবি নির্জন রাতে সাগরপাড়ে বসে প্রিয়জনের কথা ভাবেন এবং জানতে চান সে কেমন আছে। এখানে প্রিয়জনের প্রতি গভীর ভালোবাসা, বিরহ এবং মনের ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছে।]
অমর স্মৃতি অনুসরণে আজও ভাবি,
“তুমি আমার প্রাণবন্ধু, তুমি তো জীবন,
জনমে জনমে মোরা দুজনার দুজন।”
[এখানে কবির ভালোবাসা ও সম্পর্ককে অমর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি প্রিয়জনকে শুধু “প্রাণবন্ধু” বা “জীবন” হিসেবেই দেখেননি, বরং জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক হিসেবে বিশ্বাস করেন। এটি এক গভীর এবং আত্মিক ভালোবাসার প্রকাশ।]
জীবন-বাস্তবতার স্মৃতিগুলো মরে না,
বাস্তবতার ইতিহাসে স্মৃতিচিহ্ন
মানব মনে বিচরণ করে যুগ যুগান্তর।
তুমি আসবে বলেই,
ভালোবাসার স্বর্গীয় মহলে আজও বেঁচে রয়েছে
সেই অতীত ভালোবাসার স্পন্দনের দুটি মন।
[এই স্তবকে কবি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, বাস্তব জীবনের স্মৃতি কখনো মুছে যায় না। মানুষের মনে সেই স্মৃতিচিহ্নগুলো চিরকাল থাকে। প্রিয়জনের ফিরে আসার আশায়, ভালোবাসা আজও হৃদয়ে বেঁচে আছে। এটি আশাবাদ, ভালোবাসা এবং সম্পর্কের প্রতি গভীর বিশ্বাসের এক কাব্যিক চিত্র।]