উড়ন্ত পাখিরে, আর কত কাল
রবে তুমি দূর আকাশে উড়ে?
ফিরে কি তুমি আসবে না
আর অনুরাগের নীড়ে?
[এই স্তবকে কবি উড়ন্ত পাখিকে সম্বোধন করে তার অনাগমন ও দূরত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ‘উড়ন্ত পাখি’ এখানে প্রেমাস্পদ বা প্রিয়জন, যিনি দূরে চলে গেছেন। কবি জানতে চান, আর কতকাল সে এভাবে দূরে থাকবে এবং ‘অনুরাগের নীড়ে’ (ভালোবাসার ঘরে) ফিরে আসবে কি না। এই প্রশ্নটি কবির মনে প্রিয়জনের ফিরে আসার আশা ও আকুলতা প্রকাশ করে।]
উড়ে যদি যাবে পাখি, বেঁধেছিলে
কেন সুখের বাসা?
ভালোবাসার বাঁধন ছিঁড়ে রইলে
কেন সুদূরে?
অজানা পাখিরে, তুমি কেন
আসলে মোর জীবনে?
যত দূরে যাও পাখি, স্মৃতি মোর
রবে ঘরে।
[কবি এখানে প্রশ্ন তুলেছেন—যদি পাখি (প্রিয়জন) উড়েই যাবে, তবে কেন সে ‘সুখের বাসা’ (সম্পর্ক বা বন্ধন) গড়েছিল? ভালোবাসার বাঁধন ছিন্ন করে সুদূরে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। ‘অজানা পাখি’ সম্বোধনটি প্রিয়জনের রহস্যময়তা বা অপরিচয়ের দিকটি ফুটিয়ে তোলে। তবে প্রিয়জন যত দূরেই যাক, তার স্মৃতি কবির হৃদয়ে স্থায়ী থাকবে—এই আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।]
মিথ্যা আশা দিয়ে পাখি, কেন
বেঁধেছিলে স্বপ্ন-নীড়?
মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে পাখি যাবে যদি
অনেক দূরে—
তোর বিরহে কাঁদি আমি
দিবানিশি অভিশাপে।
[এই স্তবকে প্রিয়জনের চলে যাওয়ার কারণে কবির মনে যে স্বপ্নভঙ্গ ও গভীর কষ্ট সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রকাশ পেয়েছে। পাখি মিথ্যা আশা দিয়ে কেন স্বপ্ন-নীড় বেঁধেছিল, সেই প্রশ্ন উত্থাপিত। ‘মায়ার বাঁধন’ ছিন্ন করে চলে যাওয়ায় কবি নিজেকে বিরহের অভিশাপে দগ্ধ বলে মনে করছেন এবং দিনরাত কাঁদছেন। এটি এক গভীর প্রতারণা ও যন্ত্রণার চিত্রায়ণ।]
উড়ন্ত পাখিরে, আর কত যুগ রবে
তুমি লোকালয় ছেড়ে গভীর অরণ্যে?
তোর সন্ধানে ঘুরি আমি
দেশ দেশান্তরে।
[এই স্তবকে কবি বিরহী মন নিয়ে প্রিয়জনকে খুঁজে বেড়ানোর কথা বলছেন। পাখি লোকালয় ছেড়ে গভীর অরণ্যে (নির্জনতা বা অজানা পথে) চলে গেছে। কবি তাকে খুঁজে ফিরছেন ‘দেশ দেশান্তরে’—যা প্রিয়জনের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ও অস্থিরতা এবং বিরহের তীব্রতা নির্দেশ করে।]
উড়ন্ত পাখিরে, রইলে কেন নির্জনে?
ফিরে আসলে না তুমি
সুখ বসন্তের সুখের কালে।
জীবন-তরী বেয়ে রে পাখি,
কোন সাগরে রইলে ডুবে?
[এখানে কবি প্রশ্ন করছেন, পাখি কেন নির্জনতায় (একাকিত্বে বা নিরাশায়) রয়ে গেল। মুখ বসন্তের (সুখের সময়) কালে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে, যা প্রিয়জনের উপস্থিতিহীনতায় সুখের সময়কেও ম্লান করে দিয়েছে। ‘জীবন-তরী’ উপমাটি দিয়ে জীবন-যাত্রার কথা বলা হয়েছে এবং জানতে চাওয়া হয়েছে পাখি কোন ‘সাগরে’ (দুঃখ, নিরাশা বা মৃত্যুর অতলে) ডুবে রইল। এটি প্রিয়জনের অবস্থান নিয়ে কবির সংশয় প্রকাশ করে।]
জীবনের অবসানে ফিরলে না আর
প্রেমাভিসারে।
তোর বিরহে একাকিত্বে কাটে মোর
বিচ্ছেদ-অনুতাপে।
পাখিরে, তুমি চলে গেলে শোক-সাগরে,
যুগ যুগান্তর রইলে আড়ালে।
ফিরে আর আসিলে না
মোর কুটিরে।
তোর অনাগমনে জন্মে জন্মে
শূন্য নীড়ে তোমার স্মৃতি দোলে।
[এটি কবিতার শেষ এবং সবচেয়ে করুণ স্তবক। জীবনের শেষ লগ্নেও প্রিয়জন ‘প্রেমাভিসারে’ (প্রেমের আহ্বানে বা মিলনে) ফিরে এলো না। কবির জীবন বিচ্ছেদ-অনুতাপে একাকী কাটছে। পাখি শোক-সাগরে যুগ যুগান্তর আড়ালে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত প্রিয়জনের অনাগমনে কবির কুটির (হৃদয় বা ঘর) শূন্যই রয়ে গেল এবং সেই ‘শূন্য নীড়ে’ জন্মে জন্মে শুধু তার স্মৃতিই দোল খায়। এটি চিরন্তন বিচ্ছেদ ও একাকিত্বের চূড়ান্ত পরিণতি।]
লেখক: এম. এ. গফফার
শেফিল্ড, ইংল্যান্ড।
জন্মনিবাস: ঠাঁকুরভোগ, সুনামগঞ্জ।