ঢাকারবিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. আজ দেশজুড়ে
  2. আজকের সর্বশেষ
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আশাশুনি
  5. কলারোয়া
  6. কালীগঞ্জ
  7. কৃষি সংবাদ
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. গ্রামীণ সাংবাদিকতা
  11. চাকরির খবর
  12. জাতীয়
  13. জীবনযাপন
  14. তারুণ্য
  15. তালা

কবিতা: মহাপ্রলয়, লেখক: এম. এ. গফফার

এম. এ. গফফার
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫ ৩:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মহাপ্রলয়ে বন্যা এলো সিলেট সুনামগঞ্জে,
বন্যার জলে ভাসছে মানুষ, ভাসছে শত লাশ।
অনাহারে, দুর্ভোগে আর্তনাদ করছে বন্যার্তরা।

[কবিতার শুরুতেই কবি একটি ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী দুর্যোগের চিত্র তুলে ধরেছেন। “মহাপ্রলয়” শব্দটি ব্যবহার করে তিনি বন্যার ভয়াবহতাকে একটি মহাজাগতিক বা পৌরাণিক ধ্বংসযজ্ঞের সাথে তুলনা করেছেন, যা সাধারণ বন্যার চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী। স্থান হিসেবে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নাম উল্লেখ করে কবি ঘটনাটিকে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক বাস্তবতায় স্থাপন করেছেন। এই স্তবকে সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য হলো জীবিত মানুষ এবং মৃত লাশের একই জলে পাশাপাশি ভেসে থাকা। এই চিত্রটি দুর্যোগের আকস্মিকতা এবং নির্মমতাকে প্রকাশ করে, যেখানে জীবন ও মৃত্যুর ভেদাভেদ প্রায় মুছে গেছে। সবশেষে, অনাহার এবং দুর্ভোগে বন্যার্তদের আর্তনাদের কথা উল্লেখ করে কবি মানবিক সংকটের গভীরতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।]

মহাপ্লাবনে ভাসিয়ে নিলো তাদের বসতবাড়ি,
পানিবন্দি হাজার মানুষ ডুবে গেলো স্রোতে।
ভিটেমাটির চিহ্ন নেই, আশ্রয় নিবে কোথায়?
স্রোতের টানে ভাসছে লাশ, কোথায় যাবে চলে!

[এই স্তবকে কবি বন্যার ধ্বংসলীলার বস্তুগত এবং মানবিক ক্ষতির দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। “বসতবাড়ি” ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া মানে শুধু আশ্রয় হারানো নয়, বরং মানুষের স্মৃতি, নিরাপত্তা এবং পরিচিত জগৎ का ধ্বংস হয়ে যাওয়া। “ভিটেমাটির চিহ্ন নেই” — এই উক্তিটি মানুষের শেকড় হারানোর যন্ত্রণা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তাকে প্রকাশ করে। “আশ্রয় নিবে কোথায়?” — এই প্রশ্নটি কেবল একটি প্রশ্ন নয়, এটি লক্ষ লক্ষ আশ্রয়হীন মানুষের অসহায় আর্তি। ভাসমান লাশের গন্তব্যহীনতার চিত্র পুনরায় উল্লেখ করে কবি প্রকৃতির কাছে মানুষের অসহায়ত্ব এবং মৃত্যুর পরের অসম্মানকে তীব্রভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।]

মহাপ্রলয়ের এ দুর্যোগ সময়ে সরকারি ত্রাণ নাহি মেলে,
দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো মানবসেবা করে সংকটে।
সংকট মুহূর্তে মানবতার কল্যাণে বন্যার্তদের সেবা করছেন ব্যারিস্টার সুমন,
শত প্রাণের মৃত্যু মুহূর্তে এগিয়ে এলেন তৌহিদ আফ্রিদি।

[এই স্তবকে কবি দুর্যোগ মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাষ্য তুলে ধরেছেন। তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন যে দুর্গত মানুষেরা সময়মতো সাহায্য পায়নি (“সরকারি ত্রাণ নাহি মেলে”)। এর বিপরীতে, তিনি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। ব্যারিস্টার সুমন এবং তৌহিদ আফ্রিদির মতো পরিচিত ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করে কবি দুটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন: প্রথমত, সংকটের মুহূর্তে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার শূন্যস্থান পূরণে ব্যক্তি মানুষের মানবিকতাবোধ কতটা জরুরি; দ্বিতীয়ত, কবিতাটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বাস্তব ঘটনাকে (সম্ভবত ২০২২ সালের সিলেট-সুনামগঞ্জ বন্যা) কেন্দ্র করে লেখা, যা এর আবেদনকে আরও জোরালো করে তুলেছে।]

ভিটেমাটি-সর্বহারা কতো শতজন,
অনাহারে আর খাদ্যাভাবে মরছে কতো স্বজন।
স্মরণকালের ইতিহাসে সাক্ষী আকাশ-বাতাস,
মহাকালের দুর্দিনে হাজার মানুষ করছে হাহাকার।
কে বা কোথায় ভেসে গেলো, সন্ধান নাহি পায়,
স্বজন হারানোর শোকে কান্দে আপনজন।
দুর্যোগ রাতে বন্যার জলে ডুবলো কতো লাশ,
মরণকালে মৃত্যুযাত্রী করে আর্তনাদ—
মহাপ্রলয়ের সামনে প্রাণে বাঁচার করুণ আর্তনাদ।

[এই স্তবকটি কবিতার সবচেয়ে আবেগঘন অংশ। এখানে কবি দুর্যোগের শিকার মানুষদের মনস্তাত্ত্বিক যন্ত্রণা এবং গভীর শোককে তুলে ধরেছেন। “সর্বহারা” এবং “অনাহারে মৃত্যু”র মতো শব্দগুলো মানুষের চরম দুর্দশার চিত্র আঁকে। “আকাশ-বাতাস সাক্ষী” — এই উক্তির মাধ্যমে কবি প্রকৃতির বুকে ঘটে যাওয়া এই বিশাল ট্র্যাজেডির চিরন্তন রূপ দিয়েছেন। স্বজন হারানোর বেদনা, প্রিয়জনের সন্ধান না পাওয়ার হাহাকার এবং রাতের অন্ধকারে ভেসে যাওয়া মানুষের অন্তিম মুহূর্তের আর্তনাদ— এই সমস্ত চিত্রকল্প পাঠকের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে। এই স্তবকে প্রকৃতির নির্মমতার সামনে মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি ও পরাজয়ের করুণ সুর বেজে উঠেছে।]

দুর্যোগপূর্ণ দিনে-রাতে ঝরছে মেঘের ঢল,
সর্বপ্রকার যোগাযোগ আর বন্ধ মোবাইল নেটওয়ার্ক।
মরণযাত্রায় চলে যাবে বন্যার জলে ভেসে,
শেষ দেখা আর হলো না আপনজনের সাথে,
বন্যার গ্রাসে চলে গেলো আপন মানুষ ছেড়ে।

[কবিতার শেষ স্তবকে কবি দুর্যোগের নিঃসঙ্গতা এবং চূড়ান্ত বিচ্ছেদের ছবিটি এঁকেছেন। অবিরাম বৃষ্টি এবং মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া— এই চিত্রটি দুর্গত মানুষদেরকে বাকি বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতা তাদের অসহায়ত্বকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো “শেষ দেখা আর হলো না” — এই উপলব্ধি। বন্যার আকস্মিকতা মানুষকে প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগটুকুও দেয়নি। “বন্যার গ্রাসে চলে গেলো” — এখানে বন্যাকে একটি রাক্ষসের মতো কল্পনা করা হয়েছে, যা সবকিছু গ্রাস করে নেয়। এই স্তবকের মাধ্যমে কবি এক অনিবার্য এবং করুণ সমাপ্তি টেনেছেন, যা পাঠকের মনে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিষাদের ছাপ ফেলে যায়।]

 

লেখক: এম. এ. গফফার

শেফিল্ড, ইংল্যান্ড।

জন্মনিবাস: ঠাঁকুরভোগ, সানামগঞ্জ।

error: Content is protected !!