মনের ভাষায়, হৃদয়ের ভাষায়
লিখেছি তোমায়—
হৃদয়ে করেছ বাস।
[এই স্তবকে কবি তার মনের গভীর অনুভূতি প্রকাশ করছেন। তিনি বলছেন যে তিনি কোনো সাধারণ ভাষায় নয়, বরং মনের ভাষা এবং হৃদয়ের ভাষা দিয়ে তার প্রিয়জনকে লিখেছেন। এই কথা বলার মাধ্যমে কবি বোঝাতে চাইছেন যে তাদের সম্পর্কটি কতটা আন্তরিক এবং গভীর। তিনি আরও বলছেন যে সেই প্রিয়জন তার হৃদয়ে বাস করেন, যা তাদের সম্পর্কের নিবিড়তা ও একাত্মতা তুলে ধরে। এটি কবিতার মূল বিষয়বস্তু—প্রেমের আন্তরিকতা ও গভীরতার প্রথম ইঙ্গিত।]
চোখের নজরে, মনের অনুভূতিতে
রয়েছ তুমি দিবারাত্রি।
জীবন চলার প্রতিটি সময় ও মুহূর্ত
অতীত হবে, পাওয়া না-পাওয়ার বেদনায়।
তবুও মহান স্রষ্টা মানব-মানবীর মাঝে
সৃষ্টি করেছেন স্বর্গীয় প্রেম, ভালোবাসা।
[এই স্তবকে কবি তার ভালোবাসার সার্বক্ষণিক উপস্থিতির কথা বলছেন। তিনি বলছেন যে তার প্রিয়জন শুধু চোখে নয়, মনের অনুভূতির মধ্যেও দিন-রাত বিরাজমান। জীবনের পথচলায় অনেক কষ্ট ও বেদনা আসবে—পাওয়া-না-পাওয়ার বেদনা। কিন্তু এত কিছুর পরও মানব-মানবীর মধ্যে যে স্বর্গীয় প্রেম ও ভালোবাসা আছে, তা মহান স্রষ্টারই সৃষ্টি। এই অংশটি ভালোবাসাকে জাগতিক দুঃখ-কষ্টের ঊর্ধ্বে এক ঐশ্বরিক বা স্বর্গীয় অনুভূতি হিসেবে তুলে ধরে।]
জীবনের পরিপূর্ণতায় রয়েছে মানবীর প্রয়োজন,
আবার জীবন জয়ের সফলতায়
রয়েছে মানবের প্রয়োজন।
হৃদয়ের ভাষায়, মনের ভাষায়
লিখেও যদি পাই একটু সহানুভূতি,
তবুও মনের আবেগ-অনুভূতিতে
মিশে থাকবে ভালোবাসার পূর্ণ ছবি।
[এই স্তবকে কবি প্রেম ও জীবনের পারস্পরিক নির্ভরতার কথা বলছেন। তিনি বলছেন যে জীবনের পরিপূর্ণতার জন্য নারী এবং জীবন জয়ের সফলতার জন্য পুরুষের প্রয়োজন। এটি যেন একে অপরের পরিপূরক। কবি আরও বলছেন যে তার মনের ভাষায় লিখে যদি তিনি সামান্য সহানুভূতিও পান, তবে তার মনের আবেগ-অনুভূতিতে ভালোবাসার ছবিটি চিরকাল মিশে থাকবে। এই স্তবকটি প্রেমের প্রতি কবির নিবেদন এবং সামান্য হলেও স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। এটি দেখায় যে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তার আকুলতা কতটা গভীর।]
বিরহের স্রোতধারায় যত দূরেই চলে যাই,
তবুও দূর থেকে তোমায় ভাবি।
জনমে জনমে মনের ভাষায় লিখেছি তোমায়,
তবুও জীবনের অবসানে
কোনো এক নিঃসঙ্গ মুহূর্তে ভাবি তোমায়।
[এই স্তবকে কবি বিরহের তীব্রতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন যে তিনি যতই বিরহের স্রোতে দূরে চলে যান না কেন, দূর থেকেও তার প্রিয়জনকে মনে করেন। এটি বোঝায় যে দূরত্ব ভালোবাসাকে কমাতে পারে না। কবি আরও বলছেন যে তিনি জনম জনম ধরে তার মনের ভাষায় প্রিয়জনকে লিখে এসেছেন। এমনকি জীবনের শেষ মুহূর্তে, যখন তিনি নিঃসঙ্গ, তখনও তিনি তাকেই ভাববেন। এই স্তবকটি ভালোবাসার অমরত্ব এবং জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন তুলে ধরে, যা সময় বা মৃত্যুর দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।]
জীবনে পথচলার স্মৃতি-ভাবনার হবে কি অবসান?
নীরবে রবে তুমি, নীরবে থাকবে তুমি আমার মনের সাধনায়।
[ এটি কবিতার শেষ স্তবক। কবি এখানে একটি প্রশ্ন রেখেছেন: জীবনে পথচলার স্মৃতি ও ভাবনা কি কখনো শেষ হবে? এই প্রশ্নটি আসলে একটি উত্তরকে ইঙ্গিত করে—ভালোবাসার স্মৃতি কখনো শেষ হয় না। তিনি বলছেন যে তার প্রিয়জন নীরবে তার মনের সাধনার মধ্যে বিরাজমান থাকবে। এই স্তবকটি এক প্রকার স্বীকারোক্তি যে ভালোবাসার স্মৃতি চিরকাল থাকবে এবং সেই প্রিয়জন তার মনের গভীরে, নীরবে এবং নিরন্তরভাবে অবস্থান করবে। এটি ভালোবাসার এক চিরন্তন, শান্ত ও অবিচল রূপকে তুলে ধরে।]
লেখক: এম. এ. গফফার
শেফিল্ড, ইংল্যন্ড।
জন্মনিবাস: ঠাঁকুরভোগ, সুনামগঞ্জ।