ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  1. আজ দেশজুড়ে
  2. আজকের সর্বশেষ
  3. আন্তর্জাতিক
  4. আশাশুনি
  5. কলারোয়া
  6. কালীগঞ্জ
  7. কৃষি সংবাদ
  8. খেলাধুলা
  9. গণমাধ্যম
  10. গ্রামীণ সাংবাদিকতা
  11. চাকরির খবর
  12. জাতীয়
  13. জীবনযাপন
  14. তারুণ্য
  15. তালা

কবিতা: আহত পাখি, লেখক: এম. এ. গফফার

এম. এ. গফফার
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫ ৪:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আহত পাখি, তুমি করো রব
মনের বেদনায় বসে ডালে।
তবুও কেন উড়াল দিতে পারছ না
বিরহ-সুখে?

[এই অংশে কবি একটি আহত পাখিকে সম্বোধন করছেন, যা মূলত কবির আহত মনেরই প্রতীক। পাখিটি ডালে বসে বেদনায় শব্দ করছে, যা গভীর আর্তনাদ বা দুঃখের বহিঃপ্রকাশ। কবি প্রশ্ন করছেন, দুঃখ থাকা সত্ত্বেও মন কেন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, অর্থাৎ “উড়াল” (মুক্তি বা এগিয়ে যাওয়া) খুঁজে নিতে পারছে না। ‘বিরহ-সুখে’ শব্দটি এক প্রকার দ্বিধার ইঙ্গিত দেয়—দুঃখের মধ্যেও একধরণের অদ্ভুত শান্তি বা অভ্যস্ততা।]

আহত মনে রয়েছি বসে
নিরালা প্রহর রাতে,
নীরব নিঃসঙ্গতাই আমার
আহত জীবনের জীবনসাথী।

[এখানে কবি নিজের অবস্থায় ফিরে এসেছেন। তিনি নিস্তব্ধ, নির্জনে এবং গভীর রাতে বসে আছেন। তাঁর জীবনে আর কোনো সঙ্গী নেই; একমাত্র সঙ্গী হলো এই নীরবতা এবং নিঃসঙ্গতা, যা কবির আহত জীবনের স্থায়ী বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এটি এক চরম একাকীত্ব ও দুঃখ মেনে নেওয়ার চিত্র।]

কোনো এক শুভ বসন্তকালে
ভালোবাসার তীরটি বিঁধেছিল মোর হৃদয়ে,
হৃদয় থেকে ঝরেছিল বিষাদ-সমবেদনার রক্ত।

[এই স্তবকটি আঘাতের উৎস নির্দেশ করে। একসময়, সম্ভবত ‘বসন্তকালে’ (আনন্দ বা নতুন আশার সময়ে), কবি ভালোবাসার সন্ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ভালোবাসা ‘তীর’-এর মতো আঘাত করেছে, যা কেবল ব্যথা নয়, এনেছে বিষাদ ও সমবেদনার রক্তপাত। অর্থাৎ, প্রেম এখানে আনন্দের পরিবর্তে গভীর মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়েছে।]

আজও ও রক্তশূন্যতায়
উড়ন্তহীনভাবে বসে রয়েছি অভিসারে;
এ নীরব অভিসারে আর কেউ আসবে না
প্রাণের আবেগ অনুভূতি নিয়ে।
মনের বীণায় আর হৃদয়ের বাসনায়
নেই কোনো ভালোবাসার ছায়া,

[কবি আঘাতের পর রক্তশূন্যতা বা প্রাণের তেজহীনতা অনুভব করছেন। তিনি যেন এক নীরব প্রতীক্ষায় (‘অভিসারে’) বসে আছেন, কিন্তু জানেন এই নিস্তব্ধতায় আর কেউ তাঁর সঙ্গে আবেগ বা ভালোবাসা নিয়ে যোগ দেবে না। এটি গভীর হতাশা এবং প্রেমের প্রতি বিশ্বাস হারানোর চিত্র। মন ও হৃদয়ের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকে ভালোবাসার স্মৃতিটুকুও যেন মুছে গেছে।]

আহত বেদনায় চেয়ে থাকি
দূর দিগন্তের নীরবতার দৃশ্যছায়ায়।

[এই অংশটি কবির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বেদনা থেকে মুখ ঘুরিয়ে দূর দিগন্তের দিকে চেয়ে আছেন, যা অসীম এবং নিঃশব্দ। দিগন্তের এই নীরবতা কবির নিঃসঙ্গতারই প্রতিচ্ছবি; বাইরের শান্তিতে তিনি যেন নিজের ভেতরের শান্তহীন দুঃখের মিল খুঁজে পান।]

জীবন-সন্ধ্যার শেষ মুহূর্তে ভাবি,
ভালোবাসার তীরটি কেন এত বিষাক্ত?
কেন এত নির্মম? কেন হৃদয়বিদারক?

[কবি জীবনের শেষলগ্নে (‘জীবন-সন্ধ্যা’) এসে আঘাতের মূল প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন করছেন। তিনি বিস্মিত, কেন ভালোবাসা, যা মধুর হওয়ার কথা, তা বিষাক্ত, নির্মম ও হৃদয়বিদারক হয়ে উঠল। এটি কেবল আঘাতের নয়, বরং জীবনের এক গভীর দার্শনিক প্রশ্ন—প্রেমের এই বিপরীত রূপ কেন?]

জীবনে যাকে হৃদয়মাঝে এঁকেছিলাম সাথীরূপে চিত্র,
সে আজ কোথায় হারিয়ে গেল?
ভাবি আহত মনের আবেগে।

[এই স্তবকটি হারানো প্রেমিকের কথা মনে করায়। জীবনের সঙ্গী হিসেবে যাকে হৃদয়ে স্থায়ীভাবে এঁকেছিলেন, সে আজ অনুপস্থিত। আহত মনের গভীর আবেগে কবি সেই হারানোর বেদনা ও বিচ্ছেদ নিয়ে বারবার ভাবছেন।]

আহত জীবনে তিলে তিলে বিলুপ্ত হচ্ছে
তীরবিদ্ধ রক্ততা;
জীবনের আশা-বাসনাগুলো আজ
ঝড়ের পাখির মতো হারিয়ে যাবে কোনো এক অন্ধকারে।

[এখানে জীবনের ক্রমিক ক্ষয় চিত্রিত হয়েছে। আঘাতের কারণে যে প্রাণশক্তি (রক্ততা) বিলুপ্ত হচ্ছে, তার সাথে সাথে জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষাও যেন ঝড়ের পাখির মতো দিকভ্রান্ত হয়ে অন্ধকারে বিলীন হওয়ার পথে। এটি জীবনের শেষ আশাটুকুও হারানোর এক করুণ আর্তি।]

তবুও আহত মনের বাসনায়
কোনো নিশি-জাগরণে
ভাবি তীরবিদ্ধ বেদনার স্মৃতিকথা।

[সমস্ত হতাশা সত্ত্বেও, কবির আহত মন সম্পূর্ণভাবে স্মৃতিমুক্ত হতে পারে না। কোনো এক গভীর রাতে নিশি-জাগরণে তিনি সেই তীরবিদ্ধ বেদনার স্মৃতি নিয়েই পড়ে থাকেন। যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও সেই স্মৃতিকে আঁকড়ে থাকা—এটি মানুষের মনের এক অদ্ভুত দুর্বলতা বা ভালোবাসার প্রতি শেষ টান নির্দেশ করে।]

স্মৃতির জানালা খুলে আজও
ভাবি সেই স্মৃতিবিজড়িত
স্বর্ণালী দিনগুলোর স্মৃতি-ভাবনা।

[এটি হলো কবিতার উপসংহার। কবি স্মৃতির জানালা খুলে বারবার ফিরে যান তাঁর অতীতের সুখকর বা স্বর্ণালী দিনগুলোতে। আঘাতের যন্ত্রণা থাকলেও, সেই সুন্দর দিনগুলোর স্মৃতিচারণাই যেন কবির জীবনের শেষ অবলম্বন। এখানে দুঃখের গভীরেও সুন্দর স্মৃতির প্রতি এক চিরন্তন আকর্ষণ ফুটে উঠেছে।]

লেখক: এম. এ. গফফার
শেফিল্ড, ইংল্যান্ড
জন্মনিবাস: ঠাঁকুরভোগ, সুনামগঞ্জ।

error: Content is protected !!