জীবনের অবসান হলে মানুষ চলে যাবে
চির-অজানায়।
এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের চিরবাস
হবে চিরনিদ্রায়।
জন্ম-মৃত্যুর জীবনপ্রবাহে নির্দিষ্ট
একদিন সমাধিস্থ হবে প্রিয়জন।
প্রকৃতির নীরব আঁধারে একদিন
জীবনশিখা নিভে যাবে।
হয়তো সেদিন সমাধিস্থ করবে অগণিত প্রিয়জন।
[এই স্তবকটি জীবনের ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি এবং মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবী সত্যকে তুলে ধরেছে। কবি বলছেন, জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও মানুষের শেষ আশ্রয় হয় চিরনিদ্রা বা সমাধি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের এই যাত্রায় একদিন প্রকৃতির কোলে সবার জীবন প্রদীপ নিভে যাবে।]
জীবন চলার পথে যারা প্রাপ্ত করেছে
হিংসা আর ঘৃণা,
সমাধিতে কেন তারে দিতে এলে ফুল?
জীবনের বাস্তবতায় দেখেছি অনেক
ভাঙা-গড়া,
সেই ভাঙা-গড়ার নিয়মেই
জীবনের জ্বলন্ত বাতি নিভে যায়।
[এই স্তবকটি মানুষের দ্বৈত সত্তার দিকে ইঙ্গিত করে। জীবনকালে যারা হিংসা ও ঘৃণা ছড়িয়েছে, মৃত্যুর পর তাদের সমাধিতে কেন ফুল দেওয়া হয়—এই প্রশ্নটি কবি তুলে ধরেছেন। এটি মানুষের ভণ্ডামি এবং মৃত্যুর পর সব ভুল ক্ষমা করে দেওয়ার প্রবণতাকে ফুটিয়ে তোলে। জীবন ভাঙা-গড়ার খেলায় ভরা, আর এই ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই জীবনের সমাপ্তি ঘটে।]
মহাকালের চিত্রে, আকাশ-বাতাসের অস্তিত্বে
চিরন্তন সত্য হয়ে থাকবে স্মৃতিচিহ্ন সমাধি,
এ দুনিয়ার অফুরন্ত মায়া-মহব্বত,
প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য ছেড়ে নাহি যেতে চায় মানুষ।
তবুও নিয়তির চিরন্তন বাস্তবতায়
মানুষ চলে যাবে সুখের স্বর্গরাজ্যে;
চিরস্থায়ী, চির-অবিস্মরণীয় স্বর্গরাজ্যে।
থাকবে না কোনো জঘন্যতা, থাকবে না
হিংসা-প্রতিহিংসা।
[এই স্তবকে কবি সমাধিকে মহাকালের একটি চিরন্তন সত্য হিসেবে দেখিয়েছেন। যদিও মানুষ এই পৃথিবীর মায়া এবং সৌন্দর্য ছেড়ে যেতে চায় না, তবুও নিয়তির টানে তাকে সুখের এক অজানা রাজ্যে চলে যেতে হয়, যেখানে কোনো হিংসা-প্রতিহিংসা থাকে না। এটি মৃত্যুর পর এক নতুন, শান্তিময় জীবনের ধারণাকে তুলে ধরে।]
এ নশ্বর ভুবনের মানুষ মরে গেলে
পৃথিবীর অস্তিত্ব থেকে চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।
চিরদিনের চিরজনমে তাদের স্মৃতিচিহ্ন
কালের প্রবাহে অম্লান হয়ে থাকবে
যুগে যুগে।
যুগের পরিক্রমান্তে অগণিত মানুষ
সমাধিতে স্মরণ করবে তাদের
স্মৃতিময় অস্তিত্ব।
[এই স্তবকটি মৃত্যুর পরও মানুষের স্মৃতি বেঁচে থাকার কথা বলে। মানুষ শারীরিকভাবে বিলীন হয়ে গেলেও তার স্মৃতি কালের প্রবাহে অম্লান হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে মানুষ তার পূর্বপুরুষদের বা প্রিয়জনদের সমাধির মাধ্যমে তাদের স্মৃতিকে স্মরণ করে।]
জীবনপথের শেষ সীমায়
একদিন প্রিয়জন চলে যাবে
সুদূর না-ফেরার দেশে।
সেদিন হয়তো বিষণ্ণ মনে
শোকের ভাবনায় ভাবতে ভাবতে
জানতে পারবে না তাঁর সুন্দর
মনের অনুভূতির রহস্য।
সে অজানা রহস্য, রহস্যই
হয়ে থাকবে তোমার অনাগত জীবনে।
[এই স্তবকে কবি প্রিয়জনের মৃত্যু এবং তার মনের গোপন অনুভূতির রহস্য নিয়ে লিখেছেন। প্রিয়জন যখন চলে যায়, তার ভেতরের অপ্রকাশিত দুঃখ বা অনুভূতির কথা আর জানা যায় না। সেই রহস্য চিরকাল অজানা থেকে যায়, যা পরবর্তী প্রজন্মের জীবনে এক বিষণ্ণতা তৈরি করে।]
জীবন চলার পথে জনমে জনমে
সাথীরূপে আঘাত দিয়েছে যাকে,
আর যন্ত্রণা।
হয়তো জানতে পারবে না, বুঝতে
পারবে না, তার সুন্দর মনের
লুকায়িত অনুভূতির রহস্য।
সে অজানা রহস্য রহস্যই হয়ে
থাকবে তোমার অনাগত জীবনে।
জীবনের শেষ ঠিকানায় সেই
প্রিয়জন চিরশোকে থাকবে যুগ-যুগান্তর।
জীবনের বাস্তবতায় চিরস্মরণীয়,
চির-অনুকরণীয়, চির-অম্লান, চির-স্মৃতিময়
হয়ে থাকবে সমাধিস্থ স্মৃতিসৌধ।
[এই স্তবকটি আগের স্তবকের ভাবকেই আরও গভীর করেছে। কবি বলছেন, জীবনপথে অনেক সময় মানুষ তার কাছের মানুষকে আঘাত করে বা যন্ত্রণা দেয়। মৃত্যুর পর সেই প্রিয়জনের মনের লুকানো কষ্ট বা অনুভূতির রহস্য অজানা থেকে যায়। এই অনুভূতির রহস্য কখনো সমাধান হয় না এবং শোক চিরকাল রয়ে যায়। এটি সম্পর্কের জটিলতা এবং অনুতাপের অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলে।]
লেখক: এম. এ. গফফার
শেফিল্ড, ইংল্যান্ড
জন্মনিবাস: ঠাকুরভোগ, সুনামগঞ্জ।