স্মৃতির পাতায় আজও তোমাকে মনে পড়ে,
যুগে যুগে তোমার বিদায়ী অস্তিত্ব
বিলীন হয়ে গেলেও সেই স্বর্ণালী দিনের
দৃশ্যগুলো আজও আমার মনে পড়ে।
[এই স্তবকে কবি তার প্রিয়জনের স্মৃতির কথা বলছেন। যদিও প্রিয়জনটি আর তার মাঝে নেই এবং সময়ের সাথে তার বিদায়ী অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তবুও সেই সোনালী দিনের স্মৃতিগুলো কবির মনে চির উজ্জ্বল। এটি nostalgia এবং past-এর প্রতি এক গভীর longing-এর অনুভূতি প্রকাশ করে।]
তোমার চলে যাওয়ার পথ চেয়ে আজও ভাবি
তোমার অগণিত অমর স্মৃতি
গানের কথায় প্রাণের অনুভূতি দিয়ে
তোমাকে স্মরণ করি—
“তারা ভরা রাতে
তোমার কথাটি মনে পড়ে বেদনায়,
গো… মনে পড়ে বেদনায়…”
[এই স্তবকে কবি তার প্রিয়জনের চলে যাওয়ার পথে অপেক্ষার কথা তুলে ধরছেন। প্রিয়জনের স্মৃতিকে তিনি অমর বলে মনে করেন এবং তাকে স্মরণ করতে গানের আশ্রয় নেন। এখানে ব্যবহৃত গানের চরণগুলো বেদনার গভীরতা প্রকাশ করে, যা কবির হৃদয়ের যন্ত্রণা ফুটিয়ে তোলে।]
আমার বাঁধন ছিঁড়ে তুমি চির অজানায়
চলে গেলে স্মৃতির নীল আকাশে।
তোমার স্মৃতিস্তম্ভগুলো অমর হয়ে
থাকবে দিবানিশি।
[এই স্তবকে কবি বলছেন যে প্রিয়জনটি তার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে চিরদিনের জন্য অচেনা এক জগতে চলে গেছে, যা কবির কাছে স্মৃতিময় নীল আকাশ। সেই প্রিয়জনের স্মৃতিগুলো কবির হৃদয়ে স্মৃতিস্তম্ভের মতো অমর হয়ে থাকবে, যা দিন-রাত তাকে স্মরণ করিয়ে দেবে।]
তোমার মায়াময় অবিস্মরণীয় স্মৃতিদৃশ্য
আজও আমাকে নীরবে কাঁদায়।
তোমার বিদায়ের পথ ধরে
আমিও একদিন চলে যাব সুদূরে।
[এই স্তবকে কবি প্রিয়জনের স্মৃতিকে ‘মায়াময়’ এবং ‘অবিস্মরণীয়’ বলে বর্ণনা করছেন। এই স্মৃতিগুলো কবিকে নীরবে কাঁদায়। তিনি আরও অনুভব করেন যে প্রিয়জনের মতোই তাকেও একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে হবে। এখানে জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং বিচ্ছেদের বেদনা প্রকাশ পেয়েছে।]
হয়তো আমার এই পাঠকেরা স্মরণ
করবে কি আমাকে?
আমার স্মৃতিকথা স্মরণ করবে
কি অনাগত প্রজন্ম?
আবারও গানের কথায় স্মরণ করি
তোমাকে।
“চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে
কাঁদিস যেন মন,
ভাঙা-গড়ার এই জীবনের আছে সর্বক্ষণ।”
[এই স্তবকে কবির মনে একটি সংশয় দেখা যায় যে, তার মৃত্যুর পর পাঠক বা পরবর্তী প্রজন্ম তাকে স্মরণ করবে কিনা। এই সংশয় প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি আবার প্রিয়জনের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা এবং বেদনা প্রকাশ করেন। এখানে ব্যবহৃত গানের চরণগুলো জীবন ও সম্পর্কের ভাঙা-গড়ার চিরন্তন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।]
জীবন নদীর বয়ে যাওয়া মনের
আবেগে অনুভূতিতে আজও তোমাকে
মনে পড়ে ক্লান্ত দুপুর অলসবেলায়।
[এই স্তবকে জীবনের প্রবাহকে নদীর স্রোতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ক্লান্ত দুপুরের অলস সময়েও কবির মনে তার প্রিয়জনের কথা আসে। এটি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত এবং অনুভূতির সাথে সেই স্মৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে নির্দেশ করে।]
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এই মায়ার
সংসার ছেড়ে কেউই যেতে চায় না ওপারে।
[এই স্তবকে কবি জীবনের প্রতি মানুষের গভীর আকর্ষণ তুলে ধরেছেন। মানুষ এই মায়ার সংসার ছেড়ে যেতে চায় না। এখানে জীবনের প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুর স্বাভাবিক ভীতি প্রকাশ পেয়েছে।]
তবুও বিধির চিরন্তন বিধানে যেতে হয়
প্রকৃতির এই সুন্দর জগতে।
হারানোর বেদনা কত বিষাদ—
না হারালে কেউ তিলে তিলে
বুঝতে পারবে না অনুতপ্ততা।
[এই স্তবকে কবি জীবনের এক কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরেন। যদিও মানুষ যেতে চায় না, তবুও বিধির বা নিয়তির নিয়মেই সবাইকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। কবি অনুভব করেন যে হারানোর কষ্ট কতটা গভীর, যা কেবল হারানো মানুষই তিলে তিলে উপলব্ধি করতে পারে।]
জীবনের কঠিন পাতার প্রতিটি অধ্যায়ে
মনে পড়ে তোমার উপস্থিতি।
আজও সুরমার স্রোত বয়ে চলেছে অবিরত,
বয়ে চলে না তোমার আগমন।
[এই স্তবকে কবি জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে প্রিয়জনের উপস্থিতির কথা স্মরণ করেন। এখানে ‘সুরমা’ নদীর নাম উল্লেখ করে কবি জীবনের চিরন্তন প্রবাহকে বোঝাতে চেয়েছেন। নদী যেমন বয়ে চলেছে, তেমনি জীবনও বয়ে চলেছে, কিন্তু প্রিয়জনের ফিরে আসার কোনো লক্ষণ নেই। এটি তার গভীর বেদনা এবং অপেক্ষার কথা তুলে ধরে।]
খাবারের সন্ধানে পাখি
অনেক দূর-দুরাস্তে বিচরণ করে,
আবার দিবাবসানে ফিরে আসে নীড়ে।
[এই স্তবকে পাখির উদাহরণ ব্যবহার করে কবি বলতে চেয়েছেন যে, পাখি যেমন দিনের শেষে তার নীড়ে ফিরে আসে, তেমনই প্রিয়জনেরও ফিরে আসা উচিত ছিল। এই উপমাটি তার গভীর longing এবং আশা প্রকাশ করে।]
তুমি চলে যাওয়ার কত বসন্ত
অতিক্রম হলেও আজও
ফিরে এলে না নীড়ে।
তোমার অনাগমনের শূন্যতায়
নীরবে নীরবে ভাবি রজনী।
[এই স্তবকে কবি বলেন যে তার প্রিয়জনের চলে যাওয়ার পর থেকে বহু বসন্ত কেটে গেছে, কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। তার এই অনাগমন কবির হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, যা তিনি প্রতিটি রাতে নীরবে অনুভব করেন।]
মানবজীবনে আকাঙ্ক্ষা আর
বাসনায় দালান-কোঠা, বিশাল
রাজপ্রাসাদের অবস্থান ক্ষণস্থায়ী।
মানবহীন এই বিশাল রাজপ্রাসাদ
স্মৃতিসৌধ হয়ে পড়ে থাকবে অযত্নে,
মানুষ চলে যাবে চিরতরে।
[এই স্তবকে কবি জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং মানবীয় আকাঙ্ক্ষার অসারতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন যে মানুষের লোভ ও বাসনার ফসল এই বিশাল দালানকোঠা বা রাজপ্রাসাদ সবই ক্ষণস্থায়ী। মানুষ চলে গেলে এই বিশাল অট্টালিকাগুলো অযত্নে স্মৃতিসৌধ হয়ে পড়ে থাকবে। এটি জীবনের আসল মূল্যবোধের প্রতি ইঙ্গিত দেয়।]
“একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর,
রে মন আমার… কেন বান্দ দালান ঘর।”
[এই স্তবকে কবি একটি গানের চরণ ব্যবহার করে মানুষের প্রতি এই প্রশ্ন রাখেন যে, কেন মানুষ দালানকোঠা তৈরি করে, যখন একদিন তাকে মাটির ভেতরেই তার শেষ ঠিকানা গড়তে হবে? এটি জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরে এবং মানবীয় অহংকার ও লোভের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা দেয়।]
প্রচুর ধন-সম্পত্তি আর অট্টালিকা
ভিতরে সুখ নেই, মনের সুখই প্রকৃত সুখ।
[এই স্তবকে কবি বলেন যে ধন-সম্পত্তি বা বিশাল অট্টালিকার মধ্যে প্রকৃত সুখ নেই। মনের সুখই প্রকৃত সুখ, যা বাইরের কোনো বস্তুর উপর নির্ভরশীল নয়। এটি জীবনের গভীর দর্শন প্রকাশ করে।]
সাগরের স্রোতে বয়ে যাওয়া ঢেউ
যুগ যুগান্তর বয়ে যাবে,
শুধু বয়ে যাবে না মানবজীবনের
চিরন্তন গতিস্রোত।
[এই স্তবকে কবি সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মানবজীবনের তুলনা করেছেন। সমুদ্রের ঢেউ যেমন চিরকাল বয়ে চলে, মানবজীবনের গতিপ্রবাহ তেমন নয়। মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, যা একসময় শেষ হয়ে যায়। এটি জীবনের ক্ষণস্থায়ীতা এবং প্রকৃতির অনন্ত প্রবাহের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে।]
হারানোর বেদনায় জীবনে সুখের
সাধ নাই বা পেলাম।
আমার অনাগত জীবনে
আমার কবিতার কথাগুলো
প্রিয় পাঠক দৃষ্টিতে মনযোগী হবে কি?
[এই স্তবকে কবি প্রিয়জনকে হারানোর বেদনার কথা বলেন, যা তাকে আর সুখ উপভোগ করতে দেয় না। তিনি তার কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি জানতে চান যে তার মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে কিনা।]
শোকসাগরে শোকের তরী
বয়ে যাবে চিরদিন,
শোকের রাতে, দুঃখের দিনে
তোমায় ভাবি সারাদিন।
[এই শেষ স্তবকে কবি তার বেদনাকে শোকের সাগরের সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন যে তার জীবনের এই শোকের নৌকা চিরকাল বয়ে চলবে। এই শোকের দিনে এবং দুঃখের রাতে তিনি কেবল প্রিয়জনকেই স্মরণ করেন। এটি কবির গভীর এবং চিরন্তন শোকের বহিঃপ্রকাশ।]
লেখক: এম. এ. গফফার
শেফিল্ড, ইংল্যান্ড
জন্মনিবাস: ঠাঁকুরভোগ, সুনামগঞ্জ।