আমার অনাগত দিনে,
কালের গতিস্রোতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটবে।
কৃষ্ণচূড়ার ডালে বসে পাখি সুমধুর কণ্ঠে গাইবে গান।
[প্রথম স্তবকে কবি ভবিষ্যতের এক সুন্দর দিনের ছবি এঁকেছেন। তিনি কল্পনা করছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতেও প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলবে। বসন্ত আসবে, কৃষ্ণচূড়া গাছে পাখি গান গাইবে – অর্থাৎ জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকবে।]
আমার অনাগত দিনে, পাহাড় ঘেরা নদীর কলতান,
আর সবুজ শ্যামল মাঠে রাখালিয়া সুরের বাঁশি বাজবে,
হয়তো সেদিন প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করবে না আজকের লেখক।
[এই স্তবকে কবি ভবিষ্যৎ প্রকৃতির এক মনোরম দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন: পাহাড়, নদী, রাখালি বাঁশির সুর। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এক গভীর বিষাদের সুরও ফুটিয়ে তুলেছেন, এই ভেবে যে হয়তো এই সৌন্দর্য তিনি নিজে উপভোগ করতে পারবেন না। এটি এক প্রকার আত্ম-উপলব্ধি যে জীবন চলমান এবং ব্যক্তি তাতে এক ক্ষণস্থায়ী অংশ মাত্র।]
আমার অনাগত দিনে,
রাতের নীরবতায় নীল আকাশে তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলবে,
চাঁদনী রজনীর ছায়াদৃশ্যে কাশ বনের বুনো ফুলগুলো পাপড়ি মেলে সুগন্ধ ছড়াবে,
হয়তো সেদিন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করবে আগত প্রজন্ম।
[এখানে কবি রাতের প্রকৃতির শান্ত ও স্নিগ্ধ রূপ তুলে ধরেছেন। তারা ভরা আকাশ, চাঁদের আলোয় কাশফুলের সুগন্ধ—এই সব কিছুই নতুন প্রজন্ম উপভোগ করবে। কবি এখানে নিজের অনুপস্থিতিতেও প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্যের ধারা অব্যাহত থাকার কথা বলেছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি এক পরোক্ষ বার্তা দিয়েছেন।]
কালের গতিস্রোত বহে রবে অবিরত,
সময়ের স্রোতে মানুষ হারাবে আপন সুজন।
[এই দুটি লাইন কবিতার মূল সুরকে আরও গভীর করে তোলে। এখানে বলা হয়েছে যে সময় কারও জন্য থেমে থাকে না; এটি অবিরাম বয়ে চলে। সময়ের এই গতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তার প্রিয়জনদের হারায়, যা জীবনের নশ্বরতা ও বিচ্ছেদের এক চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরে।]
আমার অনাগত দিনে কাননে ফুল ফুটবে,
দক্ষিণা বাতাসে ফুলের সুগন্ধ ছড়াবে,
হয়তো জীবনের অবসানে কবি চলে যাবে দূর অজানায়,
পৃথিবীর অস্তিত্বে মিশে থাকবে কবির কবিতার বাণী।
শত জনমে, শত যুগে কবির কবিতা স্মরণ করবে কি আগত প্রজন্ম?
[কবি এখানে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের সমাপ্তি এবং তাঁর সৃষ্টিকর্মের অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। ফুল ফোটা ও সুগন্ধ ছড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃতির চিরন্তনতা বোঝানো হয়েছে। কবির শারীরিক অবসান ঘটলেও তাঁর কবিতার বাণী পৃথিবীতে রয়ে যাবে—এই ভাবনাটি একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে শেষ হয়েছে: তাঁর কাজ কি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মনে রাখবে? এটি শিল্পীর অমরত্বের আকাঙ্ক্ষা এবং একই সাথে বিস্মৃতির ভয়কে তুলে ধরে।]
আমার অনাগত দিনে,
পদ্মা মেঘনা যমুনার জলরাশি বহে রবে অবিরত,
বহে রবে সারি সারি নৌকা,
হয়তো সেদিন, আমি থাকব অনেক দূরে, বহু দূরে।
পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় পরিবর্তনে যুগে যুগে নতুন প্রজন্ম আসবে এ ধরায়।
[এই স্তবকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার কথা বলে। নদীর অবিরাম বয়ে চলা এবং নৌকার সারি—এগুলো জীবনের গতিময়তার প্রতীক। কবি আবারও নিজের অনুপস্থিতির কথা বলেছেন এবং পৃথিবী যে পরিবর্তনশীল, নতুন প্রজন্ম যে আসবে—সেই চিরন্তন সত্যকে তুলে ধরেছেন।]
হয়তো নতুন প্রভাতের সূর্যালোকের
রঙিন দিনগুলো উপভোগ করবে নবপ্রজন্ম,
সেদিন কেহ স্মরণ করবে কি
কবির কবিতার স্মৃতিচারণ?
[এখানে কবি নতুন দিনের আগমন এবং তার সৌন্দর্য উপভোগের কথা বলেছেন, যা নতুন প্রজন্মের জন্য। আবারও তিনি একই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন—তাঁর কবিতার স্মৃতি কি সেদিন কেউ মনে রাখবে? এটি কবির এক গভীর উদ্বেগ এবং আকাঙ্ক্ষা যে তাঁর কাজ যেন কালের গর্ভে হারিয়ে না যায়।]
আমার অনাগত দিনে,
কালের চিরন্তন গতিধারায়
কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় ঝড় বয়ে যাবে।
হয়তো বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির অপরূপ রূপ
রূপান্তর উপভোগ করবে আগত প্রজন্ম।
[এই স্তবকে প্রকৃতির আরও এক ভিন্ন রূপ, অর্থাৎ কালবৈশাখীর মতো বিধ্বংসী ঝড়ের কথা বলা হয়েছে, যা জীবনের প্রতিকূলতা বা পরিবর্তনের প্রতীক। এই পরিবর্তনশীল প্রকৃতির রূপান্তরও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপভোগ করবে, যা জীবনের অবিরাম প্রবাহ ও পরিবর্তনের ধারাকে ইঙ্গিত করে।]
সুন্দর জীবনের (বাস্তবতা) ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষা আর বাসনা থাকলেও চলমান ভবিষ্যৎ কি আবার
ফিরে আসবে আমার ভাবনায়?
[এই লাইনটি কবির ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক ভাবনাকে তুলে ধরে। তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেও প্রশ্ন করছেন যে চলমান ভবিষ্যতের বাস্তবতা তার কল্পনায় আবার ধরা দেবে কিনা। এটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতার মধ্যে এক সূক্ষ্ম সংঘাতকে নির্দেশ করে।]
আমার অনাগত দিনে,
জীবনের অবসানে,
নাট্যাভিনয়ের শেষ হয়ে যাবে,
ক্ষণিক অভিনয় চলবে বিশ্বময়।
[এখানে জীবনকে একটি নাটকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কবির জীবনাবসানে তাঁর ব্যক্তিগত নাট্যাভিনয় শেষ হলেও, এই পৃথিবীতে ক্ষণিকের অভিনয় অর্থাৎ জীবনচক্র অবিরাম চলতে থাকবে। এটি জীবনের নশ্বরতা এবং পৃথিবীর চিরন্তন গতির এক দার্শনিক উপলব্ধি।]
আমার অনাগত দিনে,
শত বিরহ-বেদনায় যাকে খুঁজেছি দিবসও রজনী,
তাকে আর পাবো কি আমার জীবনের শেষান্তে?
[এই স্তবকে কবি ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিরহ ও অপ্রাপ্তির বেদনা তুলে ধরেছেন। তিনি প্রশ্ন করছেন, শত খোঁজার পরেও কি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে প্রিয়জনের দেখা মিলবে? এটি মানবমনের চিরন্তন ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষার এক গভীর প্রকাশ।]
তবুও বলে যাব মানবমনের ভালোবাসার মৃত্যু নেই,
ভালোবাসা চির অমর হয়ে থাকবে যুগ যুগান্তরে,
ভালোবাসার অস্তিত্ব চির অমর, চির অম্লান,
চির অবিস্মরণীয়, চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে জনমে জনমে,
আমার অনাগত দিনে।
[কবিতার শেষ স্তবকে কবি এক চূড়ান্ত আশার বার্তা দিয়েছেন। সমস্ত নশ্বরতা, বিচ্ছেদ ও অস্থিরতার ঊর্ধ্বে তিনি ভালোবাসার অমরত্ব ঘোষণা করেছেন। তাঁর মতে, ভালোবাসা এমন এক চিরন্তন অনুভূতি যা সব প্রজন্মেই বেঁচে থাকবে, যা মানুষের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু কবির ব্যক্তিগত প্রেম নয়, বরং এক সার্বজনীন ভালোবাসার জয়গান।]
কলমে: এম, এ গফফার
শেফিল্ড, লন্ডন।
লেখা ২৯/০৫/২০২৫ ইং এবং প্রকাশকাল: ২৩/০৬/২০২৫ ইং