বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পিআর পদ্ধতি, অর্থাৎ Proportional Representation বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ভোটিং সিস্টেম।
বর্তমানে বাংলাদেশে চলছে First Past the Post (FPTP) পদ্ধতি—যেখানে প্রতি আসনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী বিজয়ী হন। কিন্তু এই ব্যবস্থায় প্রায়ই দেখা যায়, কোনো প্রার্থী ৩০ বা ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন, অর্থাৎ ৬০ বা তারও বেশি শতাংশ ভোট কার্যত অপ্রতিনিধিত্বশীল থেকে যায়।
এই পটভূমিতে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ছোট ও মধ্যম পর্যায়ের রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে। তাদের মতে, ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হলে, প্রতিটি দলের সংসদীয় আসন তাদের মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দিতে হবে। এতে যেমন ছোট দলগুলোর ন্যায্যতা রক্ষা হবে, তেমনি জনপ্রতিনিধিত্বও হবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেছেন—“আমরা ২০ লাখ ভোট পেয়েও সংসদে একটা আসন পাইনি। এটাই তো গণতন্ত্রের বিপরীত। পিআর পদ্ধতি চালু হলে জনগণের ভোট সত্যিকার অর্থে মূল্য পাবে।”
তবে বিএনপি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, এই পদ্ধতিতে সরকার গঠন জটিল হয়ে পড়ে, ছোট ছোট দল নিয়ে জোট করতে হয়, ফলে স্থিতিশীল সরকার পাওয়া কঠিন হয়। বিএনপি মনে করে, বর্তমান পদ্ধতিতে সংস্কার দরকার হলেও পিআর পদ্ধতির মতো আমূল পরিবর্তন বাস্তবসম্মত নয়।
এই ইস্যুতে ইসলামি দলগুলোর সাথে বিএনপির একটি মূলনীতিগত মতভেদ স্পষ্ট হয়েছে। যদিও অতীতে একাধিক বিষয়ে একই অবস্থানে ছিল দলগুলো, তবে পিআর পদ্ধতির প্রশ্নে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে তারা।
অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে নির্বাচনী রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে—একক আধিপত্য কমবে, ছোট দলগুলোর অংশগ্রহণ বাড়বে, এবং ভোটের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।
তবে এ বিষয়টি এখনও দেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে অপরিচিত। অনেকে জানেন না, পিআর পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে বা এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজন গবেষণা, খোলামেলা বিতর্ক ও জনসচেতনতা। কারণ, একটি নির্বাচনী পদ্ধতির পরিবর্তন মানে শুধু ভোট নয়—এটি একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থার আমূল রূপান্তরের অংশ।
ভবিষ্যতের রাজনীতি কোন পথে এগোবে—সেটি নির্ভর করবে এই বিতর্কের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে আসা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর।